সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২৩ অপরাহ্ন

এনটিআরসিএ’র ‘ভুয়া’ সনদে প্রভাষক পদে এমপিও

জনশক্তি ডেক্স:
  • আপডেট সময়: বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:২৭ pm

বিধি লঙ্ঘন করে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় করিমজান মহিলা কামিল মাদরাসায় আরবি প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ পাওয়া ওই প্রভাষকের নাম মো. মাসুম বিল্লাহ। যিনি চরফ্যাশন পৌসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল মালেকের ছেলে। ২০১৬ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীণ অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেকের তত্ত্বাবধায়নে ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)’ এর ‘ভুয়া’ সনদ দাখিল করে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। চাকরির সময় দাখিল করা এনটিআরসিএ’র ওই সনদে (৪১….৫১) উল্লেখিত নম্বর ওয়েবসাইটে খোঁজ নিয়ে (চার্জ করে) এ সংক্রান্ত কোনো সনদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বেশ কিছু অনিয়মের মাধ্যমে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

বিধি অনুযায়ী দেশের কোনো মাদরাসায় আরবি প্রভাষক নিয়োগ পেতে আবেদন করার যোগ্যতা হচ্ছে, ‘স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়/বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হতে দ্বিতীয় শ্রেণীর কামিল ডিগ্রি বা সমমান অথবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মাদ্রাসাসমূহ হতে দ্বিতীয় শ্রেণীর কামিল/সমমান অথবা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের থিওলজি অনুষদ, আরবি ও ফিকাহ বিভাগ হতে ৪ বছর মেয়াদী স্নাতক (সমমান)/ ৩ বছরের সম্মানসহ দ্বিতীয় শ্রেণীর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি/সমমান’ হতে হবে। কিন্তু মো. মাসুম বিল্লাহকে প্রভাষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই বিধির ব্যতয় ঘটানো হয়েছে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায় থেকে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা এ পদে চাকরি বিধি অনুযায়ী সঙ্গত নয়।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির শীর্ষে থাকা সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এনটিআরসিএ’র ভুয়া সনদ ব্যবহার করে প্রভাষক পদে মাসুম বিল্লাহকে নিয়োগ দিয়েছেন। সীমাহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত মাওলানা আবদুল খালেক এই নিয়োগ দিতে অন্তত ১৫ লাখ টাকা নিয়েছেন বলে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা রয়েছে। তিনি অবৈধ সুবিধা নিয়ে সম্ভাব্যতা না থাকা সত্তে¡ও নয়ছয়ের মাধ্যমে এই নিয়োগ দেন।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, মো. মাসুম বিল্লাহ অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন ২০১৬ সালে। তার ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে। আর ফলাফল প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের মে মাসের আট তারিখে। অন্যদিকে প্রভাষক পদে নিয়োগ নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)’ এর যে সনদ ব্যবহার করেছেন তাতে উত্তীর্ণ সাল ২০১৬। স্থানীয়দের মধ্যে প্রশ্ন ওঠেছে ২০১৭ সালের মে মাসে অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল বের হওয়া ওই শিক্ষার্থী কিভাবে আগের বছর অর্থ্যাৎ ২০১৬ সালে এনটিআরসিএ’র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন। অর্থ্যাৎ অনার্স পাশের আগেই তিনি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে তার দাখিল করার কাগজপত্রে প্রতিয়মান হয়। যা মোটেও সম্ভব নয় বলে মনে করছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, এনটিআরসিএ’র ওয়েবসাইটে তার এই নিবন্ধন এর অস্তিত্ব মেলেনি। স্থানীয়দের অভিযোগ দুর্নীতিবাজ সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক ও তার দুর্নীতির সহযোগিরা মিলেমিশে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে এই নিয়োগ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে করিমজান মহিলা কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া যথাযথ নিয়মে হয়েছে বলে দাবি করেন। মোটা অংকের টাকা নেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে কমিরজান মহিলা কামিল মদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব, উন্নয়ন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা ও আইসিটি) এবং বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ. কে. এম. হেদায়েতুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক। তিনি প্রভাষক পদে মো. মাসুম বিল্লাহ’র নিয়োগে অনিয়মের বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার কথা জানান।

চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি তার জানা ছিলো না, তিনি এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।

প্রভাষক পদে মো. মাসুম বিল্লাহ’র নিয়োগ এর ক্ষেত্রে ভুয়া সনদ ব্যবহার ও নানা জালজালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি আগেই অবগত হয়েছেন মাদরাসা শিক্ষা অধিপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন) জাকির হোসেন। তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জানান নিয়োগ প্রক্রিয়া অনিয়মের বিষয়টি সম্পর্কে তার কাছে অভিযোগ এসেছে। তিনি মাসুম বিল্লাহ’র পক্ষ থেকে দেওয়া সনদ যাচাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে করিমজান মহিলা কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ইয়াকুব আলী বলেন, অনার্স তৃতীয় বর্ষে থাকাকালে শিক্ষক নিবন্ধন (এনটিআরসিএ) পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যায়, এ প্রতিবেদকের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত বিধিমালা তার কাছে থাকলে সেটি দেখাতে বলা হয়। কিন্তু তিনি এ সংক্রান্ত কোনো বিধিমালা দেখাতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, এই শিক্ষক আট বছর ধরে এখানে কর্মরত, এ মাসেই তিনি এমপিওভুক্ত হয়েছেন, কিন্তু অভিযোগ ওঠায় বিল পাশ হয়নি।

শেয়ার করুন:

আরো সংবাদ
© All rights reserved © janashokti

Developer Design Host BD