ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার শেষে নির্বাচন আয়োজন করা হবে।
নির্বাচন নিয়ে শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনাসভায় কথা বলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই- প্রধান উপদেষ্টা কী করতে চান সেটা জনগণের সামনে অতিদ্রুত উপস্থাপন করবেন। তিনি একটা রোড ম্যাপের মাধ্যমে একটা অতিদ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচনের ওপর অনেক জোর দিতে চাই। রাষ্ট্র সংস্কারের ব্যাপারে নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা নির্বাচিত পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশের সংস্কার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কয়েকজন ব্যক্তি একটা সংস্কার করে দিবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই সংস্কার করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্বে যারা রয়েছে তারা সবাই যোগ্য ব্যক্তি।’
ফখরুল বলেন, ‘অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা মনে করি, তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এই সরকারের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে, জনগণের আস্থা রয়েছে, সবারই আস্থা আছে। কিন্তু অবশ্যই সেটা (নির্বাচন অনুষ্ঠান) সীমিত সময়ের মধ্যেই করতে হবে, একটা সময়ের মধ্যে করতে হবে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই করতে হবে। তা না হলে যে উদ্দেশ্য সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যাহত হবে।’
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের নায়ক শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। তবে তাদের যারা দোসর রয়েছে তারা কেউ পালিয়ে গেছে এবং কেউ লুকিয়ে রয়েছে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা হাসিনার পাশে থেকে তার দোসর হয়ে যারা মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করেছে, লুটপাট করেছে, তাদের আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের আশেপাশে দেখতে চাই না। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে তাদেরকে দেখে আমরা উদ্বিগ্ন-চিন্তিত হই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সত্যিকার অর্থে এ সরকারের সঙ্গে কোনো এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত এ সরকারকে জানতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অবশ্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মতবিনিময় করতে হবে। প্রতিবিপ্লব যাতে না ঘটে আমাদেরকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘অতিদ্রুত জনগণের চাহিদাকে পূরণ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনা করতে হবে। কিভাবে একটি নির্বাচন অতিদ্রুত করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আজকে আমাদের সামনে নতুন এক ভবিষ্যৎ এসেছে। সব জঞ্জালকে উপড়ে ফেলে দেশকে সুন্দর করে সামনের দিকে নিয়ে যেতে হবে।’
বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘বন্যায় ইতোমধ্যে কয়েকজন নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। মানুষের ঘরবাড়ি ভেসে চলে গেছে। আমরা তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি এবং পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ভাসানী অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, অধ্যাপক মাহাবুব উল্ল্যাহ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ।