৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের সাধারণ নির্বাচন দেশের ১৫৭টি উপজেলায় মঙ্গলবার (২১ মে) অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন থেকে ১৫৭টি উপজেলার প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য পাওয়া গেছে৷ এতে ১৫৭টি চেয়ারম্যান পদে ৫৯৯ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬৮৯ জন এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫২৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রোববার(১৯ মে) দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দ্বিতীয় ধাপের প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের প্রায় ৭১ শতাংশই ব্যবসায়ী। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি রয়েছেন ১০৫ জন। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় এবার কোটিপতি প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ।
চেয়ারম্যান ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীদের মধ্যে ৮ জন কোটিপতি এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে কোটিপতি রয়েছেন ৩ জন। সব পদের প্রার্থী মিলিয়ে কোটিপতির সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১১৬।
অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে এই কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় কোটিপতির হিসাবে তা আনা হয়নি বলে জানিয়েছে টিআইবি।
টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৭০ দশমিক ৫১ শতাংশই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজকে। তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আইনজীবী (৪.১৭%) ও শিক্ষক (৪.১৭%)।
একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও প্রায় ৬৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৫২ শতাংশই গৃহিণী—গৃহস্থালির কাজকে পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী। পরের অবস্থানে শিক্ষক ও কৃষিজীবী।
টিআইবি বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্যবসায়ী প্রার্থীদের সংখ্যা ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে গৃহিণী/গৃহস্থালি, কৃষিজীবী ও শিক্ষক প্রার্থীদের পরিমাণ দিন দিন কমছে।
টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ক্ষমতায় থাকার সঙ্গে দ্রুত আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। শুধু নির্বাচিত ব্যক্তি নন, তাদের স্ত্রী/স্বামী ও নির্ভরশীলদের আয় ও সম্পদ বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন, তাদের আয় ও সম্পদ বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতাও স্পষ্ট।
অস্থাবর সম্পদের শীর্ষে সেনবাগের জাহাঙ্গীর
নোয়াখালীর সেনবাগের চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদের তালিকার শীর্ষে আছেন। তার মোট অস্থাবর সম্পদ ৮৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তালিকার ২ নম্বরে আছেন ঢাকার ধামরাইয়ের সুধীর চৌধুরী, তার সম্পদ ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে আছেন মোহাম্মদ ইদ্রিস ফরাজী, তার অস্থাবর সম্পদমূল্য ২২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
আইনি সীমার বেশি জমি ৪ প্রার্থীর
চারজন প্রার্থী জমির মালিকানার দিক দিয়ে আইনি সীমা অতিক্রম করেছেন। আইন অনুযায়ী, একজন নাগরিক সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর জমির মালিক হতে পারেন। এই তালিকার শীর্ষে আছেন শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এস এম আমিনুল ইসলাম। তার মোট জমির পরিমাণ ৫৪ দশমিক ৬ একর। চার নম্বরে থাকা শিবালয়ের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুর রহিম খানের রয়েছে ৩৪ দশমিক ২৯ একর জমি।
সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে দৌলতপুরের সোনালী খাতুনের
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের নারী ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সোনালী খাতুনের ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় আয় বৃদ্ধির দিক দিয়ে সবার ওপরে। তার আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৯০০ শতাংশ। ২০০০ শতাংশের বেশি আয় বেড়েছে আরও সাত প্রার্থীর। তাদের তিনজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও দুজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।
সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ঝালকাঠি সদরের আরিফুরের
ঝালকাঠি সদরের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী খান আরিফুর রহমানের অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। তার সম্পদ বেড়েছে ১১ হাজার ৬৬৬ শতাংশ। ২০০০ শতাংশের বেশি অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে আরও ৯ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বড় দুই দলই মাঠপর্যায়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের পদকে আয় ও সম্পদ বিকাশের মাধ্যম হিসেবে দেখছেন। যার ফলে জনস্বার্থের বিষয়ে প্রাধান্য থাকছে না।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থাটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো–অর্ডিনেটর ইকরামুল হক ইভান। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের সহকারী সমন্বয়ক (অ্যাসিস্ট্যান্ট কো–অর্ডিনেটর) রিফাত রহমান ও কে এম রফিকুল আলম।