আগামী জুলাইয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। আর সেই আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছে সরকারপ্রধান। বুধবার (৩ এপ্রিল) সরকারপ্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তার দেশের সরকারের তরফ থেকে এই আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজুরুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ইয়াও ওয়েন আগামী জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানালে প্রধানমন্ত্রী সে আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন।
দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন জানিয়ে স্পিচ রাইটার বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ইতিমধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। আমি চাই, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীন সহায়তা করুক।
নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী চীনের রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল এত দিন অবহেলিত ছিল। কারণ, আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো সরকারই এ এলাকার উন্নয়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
চীন বাংলাদেশের বিশাল উন্নয়ন সহযোগী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন যে দুই দেশের মধ্যে যে সহযোগিতা চলছে, তা আগামীতে আরও জোরদার হবে। তিনি বলেন, পায়রায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর হবে। চীন সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলকে দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই এলাকায় কয়েকটি বড় নদী রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবও এখানে অনেক বেশি। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন এই এলাকার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, বিভিন্ন দিক থেকে এটি একটি চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা তা কাটিয়ে উঠে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করেছি। আমরা একটি টেকসই সরকার গঠন করেছি এবং দেশে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে চায় এবং বিশ্বস্ত বন্ধু ও উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে চীন বাংলাদেশকে সাহায্য করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশকে সহায়তা করবে, যেগুলো এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পন্ন করছেন। তিনি বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ শেখ হাসিনার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার রূপকল্প বাস্তবায়নে চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
জুলাই মাসের সফর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে ইয়াও ওয়েন বলেন, আশা করা যায় বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।
প্রধানমন্ত্রীকে তার আসন্ন চীন সফরে বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-বেইজিং ফ্লাইটের প্রথম ফ্লাইটটি ব্যবহার করার অনুরোধ জানান রাষ্ট্রদূত। তিনি আরও বলেন, চীন বাংলাদেশকে কৃষি, গ্রিন এনার্জি, আইসিটি ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে বিনিয়োগ ও সাহায্য করতে চায়।
চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে মেট্রোরেলের জন্য অংশীদারত্ব করতে তার দেশের আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, চীন আরও আম, পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়াজাত পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি একজন বিশ্বনেতাও বটে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য চীন কাজ করছে বলে জানান চীনা রাষ্ট্রদূত।