টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে চট্টগ্রামমুখী লেন হাঁটু সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে সড়কে যানচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহন চালক ও যাত্রীরা। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মিয়া বাজার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম লোকমান হোসাইন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের উপজেলার নবগ্রাম রাস্তার মাথা থেকে চৌদ্দগ্রাম বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করছে ধীর গতিতে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহন চালক ও যাত্রীরা।
কাভার্ডভ্যান চালক এমদাদ মিয়া বলেন, ভোর ৬টায় চৌদ্দগ্রামে যানজটের কবলে পড়ি। কালির বাজারের পর থেকে সড়কে হাঁটু পানি। এতে গাড়ি চালানো অনেক কষ্টকর। ধীর গতি হওয়ায় সড়কে যানজট লেগেছে। প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা ধরে আটকে আছি।
জাকির হোসেন নামের এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, ‘মহাসড়কে হাঁটু পানি আমার বয়সে কখনো দেখিনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। আমার অনুরোধ থাকবে যারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাবেন অন্তত ছোট গাড়ি নিয়ে মহাসড়কে বের না হওয়াই ভালো হবে।’
মিয়া বাজার হাইওয়ে থানার ওসি এস এম লোকমান হোসাইন বলেন, মহাসড়কে পানির কারণে যানবাহন চলাচলে ধীর গতি। যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।
হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও ফেনী জেলার কিছু অংশ তলিয়ে যায়। এতে করে চট্টগ্রামমুখী যানবাহন বেশ ধীর গতিতে চলাচল করছে। মাঝে মাঝে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। তবে ঢাকামুখী যানবাহন চলাচল করছে। হাইওয়ে পুলিশ মাঠ কাজ করছে।
এদিকে কুমিল্লায় গত পাঁচ দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে গোমতী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুমিল্লা সদর উপজেলাসহ দেবীদ্বার ও বুড়িচং উপজেলার কিছু এলাকার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে শত শত বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে। বিপাকে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছে গোমতীর পাড়ের বাসিন্দারা। প্রশাসন থেকে মাইকিং করে বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকার মানুষকে আসবাবপত্র নিয়ে অন্যত্র যেতে দেখা গেছে।
গোমতীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় কুমিল্লা সদর উপজেলার কটকবাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৮৫ কিলোমিটার গোমতী বাঁধের দুর্বল অংশ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গোমতির বিভিন্ন অংশে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো স্থানীয়রা বালুর বস্তা দিয়ে মেরামত করতে দেখা যায়।
কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি দুপুর ১টা দিকে সদর উপজেলার অংশে বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জনসাধারণকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হয়েছে। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।