নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার মিলন। মঙ্গলবার (২ জুলাই ) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে উপস্থিত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।
গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিটা দেশেই কমবেশি দুর্নীতি আছে, কিন্তু আমাদের দেশে যে দুর্নীতি হচ্ছে এই লজ্জা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বলেন, আর আমাদের সমাজে বলেন, আর বিশ্বের কাছে বলেন, দেখানোর মত এখন অবস্থা নাই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক অর্জন রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন আমি দেশে যা আনি তা চাটার দল চেটে খায়। দেশে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী এবং যুদ্ধ অপরাধীদের যে বিচার হয়েছে, তা রাজনৈতিক ইস্যু। জিয়াউর রহমানের শাসনামল নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা থাকতে পারে, পল্লী বন্ধু হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অজুহাত করে ক্ষমতায় আসছেন। সামরিক স্বৈরাচার আর গণতান্ত্রিক স্বৈরাচারের পার্থক্যটা বুঝতে হবে। পল্লীবন্ধু হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্র সংস্কার করেছেন, উপজেলা পদ্ধতি এনেছিলেন, পল্লীবন্ধু দেশের উন্নয়নের জন্য যা করেছিলেন তার মত আর কেউ করেননি। অনেকেই কিছুটা বৈধতা সংকটের প্রশ্ন তোলেন, কিন্তু আমাদের ভাষায় যেটা বলি, সাত্তার সাহেব পল্লী বন্ধু হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের কাছে দায়িত্বভার তুলে দিয়েছিলেন এবং ৯০ এ পল্লীবন্ধু শান্তিপূর্ণভাবেই দায়িত্বভার অর্পণ করেছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা সবাই যে রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলছি, এই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে ভাবতে হবে। যদি দুর্নীতির প্রশ্ন তোলা হয়, তাহলে একজন আইজি কিভাবে ৭টা পাসপোর্ট তৈরি করতে পারে। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ সাহেব তার ভাইদের জন্য কিভাবে ভুয়া আইডি করে দেন, এগুলো তো আজ জনগণের প্রশ্ন।
তিনি আরো বলেন, দুইটা মিডিয়া হাউজের দ্বন্দ্বের কারণেই কিন্তু বেনজীর আহমেদের ঘটনাটা ফাঁস হয়েছে। এই যে বাস্তব অবস্থা দেশের, আমরা তো চাই যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা অভিযান হোক। ১/১১ তেও তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান হয়েছিল, রাস্তায় গাড়ি ফেলে রেখে যেত, টাকার গাট্টি ফেলে রেখে যেত। আজকে এরকম একটা অভিযান হওয়া দরকার। যদিও ১/১১ এর সময় তারা নিজেরাই দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিল। পল্লীবন্ধু হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এর আমলেও দুর্নীতি হয়েছে, যেমন মাহমুদুল হাসান, তাকে থিফ অব বাগদাদ বলা হত। যদিও তিনি পরে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন। আমি তো নিজের দলের কথাও বললাম।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে সাদাকে সাদা কালোকে কালো বলতে হবে, আওয়ামী লীগের যে অর্জন সেগুলোও বলেন। তার সাথে বলেন যে বিচ্যুতি গুলো আছে, যেগুলো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। কেন শুধুমাত্র আমলাদের দোষ দিবেন, রাজনৈতিক নেতারাও তো দুর্নীতির সাথে জড়িত।
আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, রাজনৈতিক নেতারা কি পদ বাণিজ্য করছে না? যুগান্তর পত্রিকায় এসেছে কোটি টাকার বেশি পথ বাণিজ্য হয়েছে, শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। শুধু যে আওয়ামী লীগে পদ বাণিজ্য হচ্ছে তা নয়, যেহেতু ক্ষমতাসীন দল, হাইব্রিড বেশি থাকার কারণে পদ বাণিজ্যটা বেশি হচ্ছে । আমাদের জাতীয় পার্টির জি এম কাদেরের বিরুদ্ধেও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধেও পদ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।
গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, আওয়ামী লীগকে এই অভিযোগগুলো স্বীকার করে নিয়ে, দোষারোপের রাজনীতি বাদ দিয়ে, একটা বৃহৎ ঐক্যমতের জায়গায় আসা দরকার।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কিন্তু ভালোমন্দ দুইটাই আছে, আজকে যেমন বেনজির আহমেদ আছে গোপালগঞ্জে বাড়ি। মানিকগঞ্জের যিনি এসপি তিনিও কিন্তু গোপালগঞ্জের, তিনি একজন ক্লিন লোক। ছাত্রলীগের ফরিদপুরের সেই নেতা দুই হাজার কোটি টাকা প্রচার করেছে। সাভারে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বাড়ি গাড়ি অনেক অনেক সম্পত্তির কথা। পাশাপাশি দেখবেন শ্রমিক লীগের একজন নেতা তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে। এরকম উদাহরণ গুলো কিন্তু রয়েছে। আমি যেটা বোঝাতে চাচ্ছি, প্যারালালি কিন্তু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের দুর্নীতি অনেক বেড়েছে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে।
জিয়াউর রহমানের সময়কালের কথা তুলে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নতুন একটি রুল জারি করেছেন, যা ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের সময়ও ছিল। প্রতি পাঁচ বছর পর পর আমলাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে। আজকে কিন্তু বিচারালয় সে রেফারেন্সটি টানতে বাধ্য হয়েছে। তারমানে আমরা যতই সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলি, তাদেরও কিছু ভালো ভালো কাজ রয়েছে। পরবর্তীতে বিএনপি অর্থাৎ খালেদা জিয়ার সময়ও কিন্তু এইটা মেনটেইন করে নাই, তাহলে হয়তো হাওয়া ভবন বা যারা দুর্নীতি করেছে তারা হত না।আওয়ামী লীগও যদি শুরু থেকেই এটাকে মেইনটেইন করত তাহলে হয়তো আজকে মতিউর হতো না, পত্রিকায় এসেছে তার ছেলে যে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা সে টাকা কোথায় পেল।
তিনি বলেন, সত্যিকারে আওয়ামী লীগের যারা নেতা রয়েছে তাদেরকে কিন্তু মূল্যায়ন করা হয় নাই। মূল্যায়ন করা হয়েছে যাদের টাকা আছে তাদেরকে। আজকে পার্লামেন্টের দিকে তাকিয়ে দেখেন তাহলেই বুঝতে পারবেন। পার্লামেন্টে কিন্তু ৮০% ব্যবসায়ী রয়েছে।ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করতে পারবেন না এমনটা বলছি না। আজকে যদি প্রধানমন্ত্রী চাইতেন, ভালো লোকদেরকে কিন্তু সুযোগ করে দিতে পারতেন। যারা গুড ম্যান, গুড পলেটিক্স, গুড পার্লামেন্ট। রাজনীতির একটি গুণগত পরিবর্তন দরকার।
দেশের এই যে অবস্থা, এ থেকে পরিত্রাণ পেতে জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক নেতাদের অর্থাৎ সব দলকে মিলে ঐক্যমত হওয়া দরকার। সবাইকে একটা জায়গায় আসা দরকার যে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
গোলাম সারোয়ার মিলন মনে করেন এখনই সময় প্রধানমন্ত্রীকে এটা খুব কঠিন ভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। প্রয়োজনে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে দুর্নীতিবাজদের ধরতে হবে। তাহলেই প্রধানমন্ত্রী ইতিহাসের চিরনায়ক হয়ে থাকবেন।