বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্ববাজারে চালের দাম ১১ বছরে সর্বোচ্চ, আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা

জনশক্তি ডেক্স:
  • আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০২৩ ৫:৩১ pm

আবহাওয়াগত কারণে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় বিশ্ববাজারে চালের দাম ইতোমধ্যে ভেঙে ফেলেছে গত ১১ বছরের রেকর্ড। বাজার বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এল নিনো প্যাটার্নের আবহাওয়ার প্রভাবে অদূর ভবিষ্যতে চালের দাম আরও অন্তত ৫ গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম চাল উৎপাদন দেশ ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংস্থা রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট বি.ভি. কৃষ্ণা রাও রয়টার্সকে বলেন, ‘ভারত বরাবরই সবচেয়ে কম দামে চাল রপ্তানি করে। কিন্তু গত প্রায় দেড় বছর ধরে চাল উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে, ফলে চালের উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে।’

‘ফলে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে এবং আমাদেরও রপ্তানিমূল্য বাড়াতে হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, চাল উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানিতেও শীর্ষে রয়েছে ভারত। প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারে যত চাল কেনা-বেচা হয়, তার ৪০ শতাংশ যোগান দেয়ে এই দেশটি। ২০২২ সালে মোট ৫ কোটি ৬০ লাখ টন চাল রপ্তানি করেছিল ভারত।

চাল বিশ্বের একমাত্র প্রধান খাদ্যশস্য, যেটি উৎপাদনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া এবং মৌসুমী বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। এই গ্রহের সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত এবং প্রতি বছর বিশ্বে যে পরিমাণ চালের উৎপাদন হয়, তার ৯০ ভাগই হয় এশিয়ার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলোতে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম এই মুহূর্তে চাল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে থাকা ৬টি দেশ।

কিন্তু এল নিনো আবহাওয়া প্যাটার্ন, অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, খরা প্রভৃতি কারণে গত বছর চালের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। বাজারে বর্তমানে চালের যে দাম, তা ইতোমধ্যে গত ১১ বছরের দামের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।

ভারতীয় চালের দাম বেড়ে যাওয়াই এই উল্লম্ফণের প্রধান কারণ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাজার বিষয়ক সূচক বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি জুলাই মাসে চালের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। এর আগে গত জুন মাসে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ।

ভারতের চাল উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোর অধিকাংশ জমি দুই ফসলী; অর্থাৎ বছরে দু’বার ধান চাষ করা যায় জমিগুলোতে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক সংস্থা গ্লোবাল ট্রেডিং হাউসের তথ্য অনুসারে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশটিতে গত বছর ২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে গ্রীষ্মকালীন চালের উৎপাদন।

এদিকে, চালের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রে আসীন বিজেপি সরকারকে। কারণ, সামনের বছরই দেশটিতে লোকসভা নির্বাচন এবং খাদ্যশস্যের দাম যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নির্বাচনে।

নয়াদিল্লির একজন ডিলার রয়টার্সকে বলেন, ‘বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল-গমের দাম নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে সরকার। যদি পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়, সেক্ষেত্রে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে।’

এদিকে,পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারী দেশ থাইল্যান্ডেও গত বছর উৎপাদিত চালের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ২৫ শতাংশের বেশি। একই কারণে চতুর্থ বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারী দেশ ভিয়েতনামেও চালের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে বলে জানা গেছে।

চাল উৎপাদনে শীর্ষে থাকা অপর দেশ চীন এর মধ্যেই অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। নয়াদিল্লির ওই ডিলার জানিয়েছেন, চলতি বছর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ভিয়েতনাম থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন চাল বিশ্ববাজারে আসতে পারে— তবে ভারত ও চীনের যোগান যদি না বাড়ে, সেক্ষেত্রে এই চার দেশ থেকে আসা শস্য আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমাতে খুব কার্যকর হবে না।

এদিকে, চীনকে অনুসরণ করে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও আন্তর্জাতিক বাজারে চাল সরবরাহের পরিবর্তে তা মজুতে বেশি মনযোগী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের একজন শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক।

‘একসময় আন্তর্জাতিক চালের বাজারে ক্রেতাদের প্রাধান্য ছিল। এখন বিক্রেতাদের প্রাধান্য বাড়ছে,’ রয়টার্সকে বলেন সিঙ্গাপুরের ওই চাল রপ্তানিকারক।

শেয়ার করুন:

আরো সংবাদ
© All rights reserved © janashokti

Developer Design Host BD