প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী ব্যক্তিগণও পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে কেউ স্বেচ্ছায় আবার কেউ ছাত্রআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফলে বেশ কিছুদিন ধরে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকারের শপথের প্রথম পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে থাকলেও পরবর্তীতে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সেই সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয় সাবেক আমলা ড. মো: আব্দুর রশিদকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বড় এবং পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে ৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করেছে। বৈষম্যহীন ছাত্র আন্দোলনের অংশীদার থেকে শুরু করে সুশীল সমাজসহ সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে একাডেমিক ও প্রশাসনিকভাবে দক্ষ শিক্ষকদের নিয়োগ আশা করছেন। ন্যূনতম পি.এইচ.ডি. ডিগ্রীধারী অধ্যাপক মর্যাদার ছাত্র-শিক্ষক বান্ধব শিক্ষকদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের চালকের আসনে দেখতে ইচ্ছুক। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য পদে আবেদন করার কোন অফিসিয়াল ব্যবস্থা নেই, তারপরু আগ্রহী শিক্ষকবৃন্দ তাদের চ্যানেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর ডক্টর নিয়াজ আহমেদ খানকে উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে বিশ^বিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী ডক্টর আতিয়ার (প্রাণরসায়ন), বিএনপি-জামায়াত পন্থি শিক্ষক প্রফেসর ডক্টর আল আমিন (ফরেসট্রি), আওয়ামীপন্থি প্রগতিশীল শিক্ষক প্রফেসর ডক্টর নসরুল্লাহ বাহাদুর, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. শামীমউদ্দিন খান (ফাইন্যান্স), প্রফেসর ড. মো: ফোরকান (জেনেটিক্স); রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপিপন্থি শিক্ষক প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম ফারুকী (প্রাণিবিদ্যা), বিএনপি-জামায়াতপন্থি প্রফেসর ড. আমজাদ হোসেন (ফাইনান্স), বিএনপিপন্থি প্রফেসর ড. মোস্তফা কামাল আকন্দ (নৃবিজ্ঞান); জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রফেসর ড. শামসুল আলম সেলিম (সরকার ও রাজনীতি), প্রগতিশীল ধারার প্রফেসর ড. মানস চৌধুরী (নৃবিজ্ঞান) ; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন ইউটাব নেতা প্রফেসর ড. সাজেদুল করিম (গণিত), প্রফেসর ড. আশরাফ উদ্দিন (গণিত) এর নাম শোনা যাচ্ছে। নবীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়- ত্রিশাল; মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা গেছে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপকবৃন্দকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হতো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীবৃন্দ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে উপাচার্য নিয়োগের জন্য গণস্বাক্ষর কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ সৎ, দক্ষ এবং মেধাবী অধ্যাপকবৃন্দকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য পদসমূহে বেছে নিবেন বলে সকলেই আশা করছেন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যে শূন্যতা ও ব্যঘাত ঘটেছে তা দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুতই গতিশীল হয়ে ওঠবে বলে সকলেই আশাবাদী।