শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৭ পূর্বাহ্ন

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছে এক ডজন ব্যবসায়ী, আমলা ও এমপি

জনশক্তি ডেক্স:
  • আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩ ৪:৩৫ pm

বিশেষ প্রতিনিধি: এবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছেন এক ডজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী। এরা সবাই স্বানামধন্য এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। এদের মার্কিন ভিসা বাতিল হবে। একই সাথে এদের পরিবারের কারো মার্কিন ভিসা থাকলে সেসবও বাতিল করা হবে। এদের বিরুদ্ধে অবৈধ পন্থায় অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুযায়ী এদের নাম প্রকাশ করা হবে না। গত রোববার (৬ আগস্ট) থেকে বাংলাদেশ সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দূর্নীতি দমন বিভাগের সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ। বাংলাদেশ সফরে তিনি দূর্নীতি দমন কমিশনের সচিব, পরারাষ্ট্র সচিব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সিরিজ বৈঠক করেন। প্রতিটি বৈঠকেই অর্থপাচারে কারা কি ধরনের ভূমিকা পালন করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান নেফিউ। অর্থপাচার রোধে সরকারের আইন এবং বিধি বিধানও পর্যালোচনা করেন মার্কিন এই কর্মকর্তা। অর্থপাচারকারীদের সাথে সরকারের সম্পর্ক কি সে সম্পর্কেও খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি।

বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, রিচার্ড নেফিউ ৩৫ জনের একটি তালিকা নিয়ে এসেছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে। এই তালিকায় অন্তত তিনজন বর্তমান সংসদের এমপিও রয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিক ব্যবসায়ী। এরা প্রত্যেকেই অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং শাসক দলের ঘনিষ্ট বলে জানা গেছে। অন্তত ১০ জন সরকারী কর্মকর্তাও এই তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দূর্নীতি দমন বিভাগ ৫টি প্রেক্ষিতে একজন ব্যক্তিকে অর্থপাচারকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে-

১. বাংলাদেশ সরকারের বৈধ অনুমতি না নিয়ে বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি যেমন বাড়ি, ঘর, হোটেল, রেঁস্তোরা বা কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান স্থাপন।

২. বৈধ চ্যানেল ছাড়া ব্যাংক একাউন্ট এবং তাতে অস্বাভাবিক লেনদেন।

৩. বিদেশে অবস্থানরত সন্তান বা স্ত্রীর নামে অস্বাভাবিক অর্থ বা সম্পদ থাকা।

৪. বিদেশে কোন কোম্পানী প্রতিষ্ঠা বা কোম্পানীর শেয়ার কেনা।

৫. অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট কেনা যায়, এমন দেশের পাসপোর্ট গ্রহণ।

মার্কিন বৈশ্বিক দূর্নীতি দমন বিভাগ কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের বিষয়টিই অনুসন্ধান করেনি, বরং বাংলাদেশ থেকে অন্যান্য কোন কোন দেশে কি পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেছে।

বাংলাদেশ থেকে অর্থ-পাচারের ১১ ঠিকানা:-

মার্কিন দূর্নীতি দমন বিভাগের তদন্তে দেখা গেছে, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয় মূলত: ১১টি দেশে, এই দেশ গুলো হলো: সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কাতার, কানাডা, সাইপ্রাস, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। তবে এখন সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের স্থিতি কমেছে অস্বাভাবিক ভাবে। এই দুটি দেশে পাচারকৃত অর্থ জব্দ হতে পারে এমন শংকা থেকেই গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে পাচারকারীরা তাদের অর্থ এদুটি দেশ থেকে সরিয়ে ফেলা শুরু করে। মূলত: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৈশ্বিক দূর্নীতি দমন বিভাগ এই অস্বাভাবিক অর্থ স্থানান্তরের প্রেক্ষাপটেই তদন্ত শুরু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সুইজারল্যান্ড থেকে পাচারকৃত অর্থ তিনটি দেশে স্থানান্তর হয়েছে বলে বৈশ্বিক দূর্নীতি দমন বিভাগের কাছে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। যে তিনটি দেশে যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশীদের অর্থ গেছে সেই দেশ ৩টি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া।

সন্দেহের তালিকায় ৩৫ জন:

অর্থ পাচারকারী হিসেবে মার্কিন সন্দেহের তালিকায় আছেন ৩৫ জন। এদের মধ্যে ব্যবসায়ী ১৫ জন। এই ১৫ ব্যবসায়ীর মধ্যে অন্তত ৩ জন বর্তমান সংসদের এমপি। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সবাই প্রভাবশালী এবং বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। পাঁচজন রাজনীতিবীদ আছেন ৩৫ জনের তালিকায়। এদের মধ্যে অন্তত একজন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা।

সন্দেহভাজনের তালিকায় ১০ জন সরকারী কর্মকর্তা (কর্মরত ও অবসর প্রাপ্ত) এবং ৫ জন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা। সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন এখনও কর্মরত এবং চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগে আছেন।

নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসছেন ১২জন:

৩৫জন সন্দেহের তালিকায় থাকলেও প্রথম পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবেন ১২ জন। এই ১২ জনের মধ্যে ৬ জনই ব্যবসায়ী। বাকীরা সাবেক সরকারী কর্মকর্তা ও রাজনীতিবীদ।

জানা গেছে রিচার্ড নেফিউ এর সফরের পরপরই এদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়া শুরু হবে। সূত্র: বাংলা ইনসাইডার

শেয়ার করুন:

আরো সংবাদ
© All rights reserved © janashokti

Developer Design Host BD