ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সঙ্গে চলছে তীব্র ঝড়ো বা দমকা হাওয়া। উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলোচ্ছ্বাস। ফলে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকেছে জোয়ারের পানি। এছাড়া ঝড়ের দাপটে ভেঙে পড়ছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা।
এরইমধ্যে পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও বরিশালে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত এসব মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বরিশাল: জেলার রুপাতলী এলাকায় একটি ভবনের ছাদের দেয়াল ধসে খাবারের হোটেলের টিনের ওপর পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান ও কর্মী মোকসেদুর রহমান। সোমবার ভোরের এ ঘটনায় শাকিব নামে আরো এক হোটেলের কর্মী আহত হয়েছেন। তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ বলেছেন, ভোরে লোকমান, মোকসেদুর ও শাকিব টিনশেডের তৈরি হোটেলের ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এ সময় বাইরে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পাশের তিনতলা ভবনের ছাদের দেয়ালের কিছু অংশ ধসে হোটেলের টিনের চালে উপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আরিচুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বরিশাল নগরীর রুপাতলী এলাকায় লিলি পেট্রোল পাম্পের পাশে ভোর ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দুজনের লাশ এবং আহত অবস্থায় অপরজনকে উদ্ধার করেন।
ভোলা: জেলার লালমোহন উপজেলায় ঘর চাপায় মনেজা খাতুন (৫৪) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর রাতের দিকে উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় প্রচণ্ড বাতাসে নিজ ঘর ভেঙে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এতে ঘটনাস্থলে ওই নারীর মৃত্যু হয়। তার পিতার নাম সিদ্দিক মাঝি। নিহতের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
সাতক্ষীরা: জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে রোববার সন্ধ্যায় শওকাত মোড়ল (৬৫) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। তিনি গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামের মৃত নরিম মোড়লের ছেলে।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত শওকাত মোড়লের পুত্রবধূ আছমা খাতুন জানান, রোববার সন্ধ্যার দিকে তার শ্বশুর শওকাত মোড়ল স্ত্রীকে নিয়ে নাপিতখালী আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে রাস্তায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
পটুয়াখালী: জেলার কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের হাত থেকে ফুফু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুরে ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত শরীফ অনন্তপাড়া এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। দুপুর ২টার দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুফাকে নিয়ে বোন এবং ফুফুকে উদ্ধার করতে যায়। এ সময় সমুদ্রের পানিতে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিল। সাঁতার কেটে তারা ফুফুর ঘরে যাওয়ার সময় সমুদ্রের ঢেউয়ের তোড়ে শরীফ হারিয়ে যায়। পরে ঘণ্টাখানেক পর ওই স্থান থেকে শরীফের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।
মহিপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন তালুকদার জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম: নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার টেক্সটাইল আবাসিক এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় (২৬) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৭ মে) সকালে চন্দননগর বেলতলায় এ ঘটনা ঘটে।
বায়েজিদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে চন্দননগর বেলতলা এলাকায় দেয়াল ধসে একজন নিহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম ঘটনাস্থলে কাজ করছে।