শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:৪৭ পূর্বাহ্ন

সবুজায়নে বড় কারখানায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে ৯৬.৮৬ শতাংশ

জনশক্তি ডেক্স:
  • আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩ ৫:১২ pm

পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব স্বীকৃত সবুজ কারখানার সনদ পেয়েছে বাংলাদেশের শতাধিক পোশাক কারখানা। ফলে বড় কারখানায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে ৯৬.৮৬ শতাংশ। আর চিকিৎসা খরচ কমেছে ৮৯.৫৮ শতাংশ।

সিপিডি ও সুইডেন দূতাবাসের যৌথ আয়োজনে মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের সবুজ রূপান্তর নিশ্চিত করা শীর্ষক ডায়ালগে এসব তথ্য উঠে আসে।

ডায়ালগে তৈরি পোশাক খাতের সবুজায়ন নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির রিসার্স ফেলো মুনতাসির কামাল।

২০২২ সালের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়কালে ৪০৩ ফ্যাক্টরি থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত ও ৪৫৪১ কর্মকর্তা, কর্মচারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে থেকে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় প্রতিষ্ঠানে সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে বড় কারখানার ৯৬.৮৬ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, ৮৯.৫৮ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৮৪.১৬ শতাংশ ও ৯৫. ০৭ শতাংশ বেড়েছে। বড় ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ৩৪.০৯ শতাংশ।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানে সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ৮১.৫৪ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, ৬৫.২০ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৪.৫৯ শতাংশ ও ৭৬.৩৩ শতাংশ বেড়েছে। এই ধরনের ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ৩৩.৮০ শতাংশ।

সবুজায়নের পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে মাইক্রো কারখানার ৮৪.৪৮ শতাংশ স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমেছে, ৬৩.১৩ শতাংশ চিকিৎসা খরচ কমেছে। অন্যদিকে কারখানা ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা যথাক্রমে ৬৩.৮৭ শতাংশ ও ৭৫.৭১ শতাংশ বেড়েছে। মাইক্রো ফ্যাক্টরির মুনাফা বেড়েছে ১৫.৯৫ শতাংশ।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তদারকি, সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়সহ নানা কারণে পোশাক কারখানায় সবুজায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনেক কারখানার বিভিন্ন ধরনের সবুজায়ন সার্টিফিকেট নিয়েছে। এর পাশাপাশি দেখছি-লিড একটা সার্টিফিকেশন আছে, যেটা ইউএস জিএফের অধীনে হয়ে থাকে। সেটার মধ্যে এনার্জি, ওয়াটার, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, কেমিক্যাল ওয়েস্ট এই সবই আছে। সেই সার্টিফিকেট প্রায় ২০০ কারখানা নিয়েছে, আর ৪০০-৫০০ পাইপলাইনে আছে।

তিনি বলেন, আমরা যখন বায়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি, তখন শুনছি তাদের চাহিদা ভিন্ন। সবুজের সংজ্ঞা, সূচক ভিন্ন এই সার্টিফিকেশনের ক্ষেত্রে। সেখানে এক ধরনের বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। এই চাহিদাগুলো যদি একীভূত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তাহলে রপ্তানি কারকদের সুবিধা হয়। একেক রপ্তানিকারকের চাহিদা একেক রকম, লিডকে অনেক বায়ারই স্বীকার করতে চায় না। তার মানে আরও প্রস্তুতি নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, এই গবেষণা আমাদের ৯ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে।

আমরা সবুজ ও নবায়নযোগ্য বিদ্যুতে মনোযোগী হয়েছি। রপ্তানিতে পোশাক খাতের অবদান ৮৫ শতাংশ। এখানে সবুজায়নের পাশাপাশি দূষণ ও কমাতে হবে।

তিনি বলেন, এনফোর্সমেন্ট- রেগুলেশন এগুলো গর্ভনেন্স ইস্যু। এইটা সবচেয়ে কঠিন। এনফোর্সমেন্ট ও রেগুলেশন ঠিক মতো হলে আমাদের বাজার অর্থনীতি ঠিক মতো কাজ করে। বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করা নয়, সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব। বাজার যাতে কাজ করতে পারে। এতে পরিবেশের ওপর যেন ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে বাজারে কোনো রকম খবরদারি না করে বাজারকে সহযোগিতা করা, প্রতিযোগিতামূলক বাজার কাঠামোর মধ্যে যেন সবাই কাজ করে সেটা দেখা সরকারের দায়িত্ব।

তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাতের প্রাইস ফরমেশন সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারে না, প্রাইস চাইতেও পারে না। বায়ারদের কাছ এটা চাইতে হবে শিল্প মালিকদের। ভালো পণ্য চাইতে হলে, সবুজায়ন চাইলে বায়ারদের প্রিমিয়াম প্রাইস দিতে হবে কারণ আমরা জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের মধ্যে আছে। এক্ষেত্রে সরকার সবুজায়ন করার ক্ষেত্রে নীতি সহায়তা দিতে পারে।

বিজিএমইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, আমাদের সবুজ কারখানা গ্লোবাল মডেল হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। আমার মনে হয়, সিপিডিকে অন্যান্য দূষণ সৃষ্টিকারী শিল্পের দিকে মনোযোগ দেওয়া দরকার। পোশাক কারখানা এরই মধ্যে তীব্র নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০০ এর অধিক সবুজ কারখানা আমাদের আছে। ৭৩টি প্লাটিনাম রেটিং, ১৫০টি গোল্ড, ১০টি সিলভার রেটিং। বিশ্বের সেরা ১৫টি লিড ফ্যাক্টরির ১৩টি বাংলাদেশে। ৫০০০ ফ্যাক্টরি সবুজায়ন সার্টিফিকেট নেওয়ার পথে আছে।

ব্যবসায়ী তাবিথ আউয়াল বলেন, আমাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া যতই সবুজ হোক না কেন, বের হওয়া পণ্যটি যদি সবুজ না হয়, এটা ভবিষ্যতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে। ফ্যাশন কোম্পানিগুলোকে ২০৩০ সাল নাগাদ উৎপাদনের একটা অংশ রিসাইকেল টেক্সটাইল দিয়ে করতে হবে। আমাদের রিসাইকেল করা যায় এমন বর্জ্যের উৎসের প্রয়োজন। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বছরে ৫.৮ ট্রিলিয়ন টেক্সটাইল বর্জ্য উৎপন্ন করে। আমরা যদি সেটা সংগ্রহ করতে পারি তাহলে রিসাইকল পণ্যে উৎপাদনের বড় সমস্যা সমাধান করতে পারব। কিন্তু সরকার বর্জ্য নিয়ে বর্জ্য বলতে চায় না।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন

শেয়ার করুন:

আরো সংবাদ
© All rights reserved © janashokti

Developer Design Host BD