বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

সিংগাইরে জামায়াত -শিবিরের উত্থান ও ক্রমবিকাশ এবং বর্তমান প্রেক্ষিত:মাওলানা আব্দুল মান্নানের অবদান

জনশক্তি ডেক্স:
  • আপডেট সময়: রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ৭:০৫ am

বিশেষ প্রতিবেদক:

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির সুশিক্ষিত মার্জিত নম্র ভদ্র সভ্যলোকদের আদর্শিক সংগঠন। যারা ভীরু নয় বিপ্লবী, আপোষহীন, সংগ্রামী, অদম্য, সম্মুখ পানে এগিয়ে যাওয়াই যাদের নেশা, যারা জনদরদী মানবহিতৈষী, মৃত্যুকে করে আলিঙ্গন, শত্রুর সাথে ধরে পাঞ্জা, অকতোভয়-নির্ভীক বিজয়কে ছিনিয়া আনা যাদের একান্ত কাম্য। ভৌগোলিকভাবে সিংগাইর ঢাকার অতি নিকটে হওয়ায় রাজনীতিবিদদের নিকট এটি অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি মানিকগঞ্জ -২ আসনের অন্তর্ভুক্ত, এ আসনে সাবেক দুইজন কেন্দ্রীয় সভাপতির বাড়ি, প্রথম কেন্দ্রীয় সভাপতি শহীদ মীর কাসেম আলী (হরিরামপুর) এবং জাহিদুর রহমান (কাফাটিয়া)। দেশের অন্যান্য জায়গার জামায়াত-শিবিরের প্রচার প্রসার পদচারণা বেশি থাকলেও সিংগাইরে ততটা ছিল না।

যতটুকু জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে মরহুম খলিল মাস্টার গারাদিয়া ও মরহুম ক্বারী জামাল কালিয়াকৈর তারা নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক কাজকর্ম করলেও সিংগাইর সদর ও অন্যান্য এলাকায় জামায়াতের উল্লেখযোগ্য কোন প্রচার প্রসার ঘটাতে পারেননি।

১৯৯৬ সালে ঘোনাপাড়া মসজিদে মরহুম প্রফেসর আলী আকবর সাহেবের নেতৃত্বে একটি সভা হয় কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের গুন্ডারা সে সভা পন্ড করে দেয় এবং লোকদেরকে মারধর করে। ফলে দাওয়াতি কার্যক্রম আর প্রকাশ্যে হতে পারেনি, গোপনে গোপনে কাজ চলতে থাকে।

আরও পড়ুন: জনসমুদ্রে রূপ নেয় সিংগাইরে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

১৯৯৭/৯৮ সালে মরহুম ইন্তাজ আলী মাস্টারের (কাফাটিয়া) ভাতিজা গোবিন্দল গ্রামের মরহুম হাজী সদাগর আলী কেরানী সাহেবের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। সেই সাথে সওদাগর আলী সাহেব ও তার বড় ছেলে অলি আহাদ সহ প্রমূখকে সংগঠনের দাওয়াত দিতেন । বেশ কিছুদিন এদিকে আনাগোনা করলেও উনার ইন্তেকালের পর দাওয়াতি কার্যক্রম থেমে যায়।

২০০০ সালে আওয়ামী ফ্যাসীবাদী আমলে সিংগাইর বাজারে মাত্র ছয় সাতজন লোক নিয়ে শিবিরের একটি মিছিল হয় সেখানে ছিলেন অধ্যক্ষ মুফতি জামাল হোসেন মাওলানা, ওসমান গনি, শহীদ মাওলানা নাসির উদ্দিন, মাওলানা খলিলুর রহমান হেনা, মাওলানা ইকবাল হোসেন প্রমূখ। তারা কয়েক বৎসর শিবিরের প্রচার প্রসার করেন এবং গোবিন্দল নতুন বাজারে কয়েকটি সভা ও সমাবেশ করেন, যেখানে উপস্থিত ছিল তিন থেকে চারশ নেতাকর্মী। এরপর থেকে দাওয়াতি কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকলেও যার গতি ছিল ধীর, সিংগাইর পৌর ও সদর এলাকার বাইরে দাওয়াত পৌঁছাতে পারেননি।

২০০১ সালে বিএনপির জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সিংগাইর উপজেলার জামায়াতের আমির নিযুক্ত হন মাওলানা মোস্তফা, প্রায় দীর্ঘ কুড়ি বছর দায়িত্ব পালন করার পরও তিন থেকে চারজন রোকন বৃদ্ধি করতে পারেন এবং এভাবেই ধীর গতিতে চলতে থাকে দাওয়াতী কার্যক্রম। কিন্তু এ দাওয়াতি কার্যক্রম প্রত্যেক ইউনিয়নে উল্লেখযোগ্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি।

নভেম্বর ২০২২ সালে সিংগাইর উপজেলার আমিরের দায়িত্ব পান মাওলানা আব্দুল মান্নান। এই ভদ্রলোক চাকরি করেন সাভার জিরানি আর বাসা মানিকগঞ্জ শহরে, আর দায়িত্ব হলো সিংগাইরে। তার দায়িত্ব কালের মাত্র পৌনে দুই বছরে তিনি যা করেছেন তা অবিশ্বাস্য। ১৭ জন রোকন বৃদ্ধি করেছেন, প্রতিটি ইউনিয়নে শক্তশালী কমিটি গঠন করেছেন, ওলামা বিভাগের কমিটি গঠন করেছেন, শ্রমিক ফেডারেশনের কমিটিকে করেছেন মজবুত।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর কর্মী সমাবেশে যে হাজার হাজার লোকের উপস্থিতি তা প্রমাণ করে সিংগাইরে জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম স্বগৌরবে এগিয়ে চলছে। ইনশাআল্লাহ, এভাবে চলতে থাকলে একদিন সিংগাইরের মাটি জামায়াত-শিবিরের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত হবে।

লেখক
অধ্যক্ষ মুফতি মোঃ জামাল হোসেন
সাবেক শিবির নেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শেয়ার করুন:

আরো সংবাদ
© All rights reserved © janashokti

Developer Design Host BD