সিঙ্গাইর (মানিকগঞ্জ): মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ঘোনাপাড়ায় রাস্তা দখল করে স্থাপনা তৈরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় এক প্রভাবশালী আদম বাবসায়ীর বিরুদ্ধে। রাস্তার একপাশে মাটি ভরাট করে ও অন্য পাশে বিল্ডিং করার জন্য পিলার স্থাপন করে বহুবছরের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেয় হয়। এতে নয়াপাড়া, বকচর, বিনোদপুরের এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিশেষ করে গোবিন্দল ঘোনাপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ১ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে স্কুলে যেতে হচ্ছে।
জানা যায়, গোবিন্দল-ঘোনাপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের পুর্ব পার্শে ঘোনাপাড়া ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে দিয়ে নয়াপাড়া, বকচর ও বিনোদপুর এলাকার মানুষের দীর্ঘ প্রায় ৫০বছরের চলাচলের রাস্তা। স্কুলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে অই এলাকার আকতারুজ্জামান সোহেলের উদ্যোগে স্থানীদের সহযোগীতায় আইলের উপর দিয়ে মাটি ফেলে চলাচলের জন্য ছোট্ট রাস্তা তৈরি করে দেয়া হয়। কিন্তু হঠাৎ করে আওলাদ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী পরিকল্পিত ভাবে তার জমিতে মাটি ভরাট করে রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়। তার দাবি মতে তার জমির উপর দিয়েই রাস্তা, তাই তিনি রাস্তা দিবেন না বলে জানিয়ে দেন। ঘোনাপাড়া সড়কের পাশেই আওলাদের জমিটি। তিনি শুধু মাটি ভরাট করেই রাস্তা বন্ধ করেন তা নয়, ঘোনাপাড়া সড়কের পাশে তিনি বিল্ডিং করার উদ্দেশে পিলার তৈরি করেন। স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে সিঙ্গাইর থানা, পৌরসভা ও উপজেলা মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত স্থাপনার কাজ বন্ধ রাখতে বললেও বন্ধ হয়নি কাজ, উঠছে বিল্ডিং এর পিলার।
পুলিশের উপস্থিতিতে রাস্তা দিতে রাজি হন আওলদা হোসেন। এরপরও তিনি রাস্তা খুলে না দিয়ে কাজ চালিয়া যান। সিঙ্গাইর পৌরসভা থেকে মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নোটিশ জারি করেন। উপজেলা থেকেও কাজ বন্ধ রাখার মৌখিক আদেশ জারি করা হয়, এ সত্যেও তিনি পিলার তুলেছেন। এলাকাবাসী রাস্তা খুলে দেয়ার দাবি তুলে প্রতিবাদ করেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই রাস্তাটি দীর্ঘ প্রায় ৫০বছরের। এত বছরের পুরনো রাস্তা বন্ধ করে দিলে এখান দিয়ে তাদের চলাফেরা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে তারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। তাদের সন্তানেরা যারা গোবিন্দল ঘোনাপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের অনেক দূর দিয়ে ঘুরে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এলাকার মানুষকে কষ্ট করে অন্য রাস্তা হয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় রাস্তাটি খুলে দেবার দাবি জানান নয়াপাড়া, বকচর, বিনোদপুর এলাকাবাসী।
স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, তারা এই রাস্তা দিয়ে স্কুকে যাতায়াত করে আসছিল। কিন্তু তাদের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করে দেয়ায় তাদের অনেক দূর ঘুরে স্কুলে আসা যাওয়া করতে হয়। অনেক শিক্ষার্থীকে হেমায়েতপুর মানিকগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক হয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। এতে অনেকে জীবন ঝুকির মধ্যে রয়েছে বলে জানান গোবিন্দল ঘোনাপাড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
গোবিন্দল ঘোনাপাড়া মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলাম সরকার জানান, রাস্তাটি নয়াপাড়া, বকচর, বিনোদপুর এলাকায় মানুষের জন্য, ঔ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য চলাচলের রাস্তা। রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঔ এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। প্রশাসন যদি রাস্তাটি খুলে দেয়ার উদ্যোগ গ্রহন করে করে তাহলে সবার জন্য মঙ্গল হয়।
আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি বকচর গ্রামে বসবাস করি। আমাদের গ্রামের ও পাশের গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা এই রাস্তা দিয়ে আমাদের এলাকার একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে। বিগিত কিছুদিন আগে ভূমিদস্যু আওলাদ হোসেন স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটি দখলে নিয়ে নেয়। যার জন্য আমি গ্রামবাসীর পক্ষে উপজেলা ইউএনও, পৌরসভা মেয়র বরাবর দখাস্ত করি। সেই ক্ষোভে আওলাদ হোসেন আমার বিরোদ্ধে চাঁদাবাজি অভিযোগ করে। এবং গ্রামের যারাই রাস্তার পক্ষে কথা বলতে আসে, তাদেরও মামলা হামলার হূমকি দিয়ে আসছে আওলাদ হোসেন।
এবিষয়ে সিঙ্গাইর পৌর মেয়র আবু নাঈম মোহাম্মদদ বাশার বলেন, আমরা রাস্তা দখলের অভিযোগ পেয়েছি, সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কোন ধরণের কাজ না করার কথা বলে নোটিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু শুনেছি আমাদের আদেশ অমান্য করে আওলাদ হোসেন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কোন স্থাপনা করতে হলে ৩ফিট সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য রেখে কাজ করতে হয়। কিন্ত সেখানে জমির মালিক আওলাদ হোসেন নিয়ম না মেনেই বিল্ডিং স্থাপন করছেন। আমরা দ্রুত এর ব্যবস্থা গ্রহন করব।
এবিষয়ে সিঙ্গাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার বলেন, আমরা দুই পক্ষের অভিযোগ পেয়েছি, বুধবারে আমরা স্থানটি পরিদর্শনে যাব, এরপর তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।