শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:০৯ অপরাহ্ন

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশেষ মহলের সন্ধি, সিংগাইরে জরিপে উৎকোচ কোটি কোটি টাকা

জনশক্তি ডেস্ক
  • আপডেট সময়: সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ ৬:২১ pm
(স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশেষ মহলের সন্ধি)

জসিম উদ্দিন সরকার, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের সিংগাইরে সম্প্রতি শেষ হওয়া ফতেপুর মৌজায় বিডিএস জরিপের নামে জরিপ টিমের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ ওঠেছে। জনবান্ধব সরকারের সুনাম ব্যাহত করে ভূমি জরিপে অসৎ কর্মকর্তাদের নীতি-আদর্শ খর্ব করে উৎকোচ নেয়ার হিরিক এবং অন্যদিকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাজে অনিহা ও সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এখানে রাম রাজত্ব কায়েম করে ভূমি জরিপ টিম। সহজ সরল দরিদ্র কৃষকদের ওপর স্ট্রীম রোলার চালিয়েছে এমনটাই মনে করেন ভুক্তেভুগী ও সুশীল সমাজ।

টাকা না দিলে রেকর্ড না করে দেয়ার তালবাহানা, বিভিন্ন অজুহাতসহ তাদের আনুগত্য এলাকার একটি বিশেষ মহলের ভয়ে এতদিন মুখ খুলতে সাহস পাননি এলাকাবাসি। সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ভুক্তোভুগীদের ভিডিও ফুটেজসহ প্রকাশিত সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। আর তাতেই নড়েচড়ে বসে জরিপ টিমের সার্ভেয়ার রবিউল, জরিপ পরিচালনাকারী আলম, মিজান ও মোস্তফা। জরিপ টিমকে বাঁচাতে ওঠে পড়ে লাগে তাদের লালিত স্থানীয় একটি চক্র এমনটাই অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তোভুগীদের।

অন্যদিকে নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে অভিনব কায়দা অবলম্বন করে তারা কিছু লোকজনদের শেখানো বক্তব্যের ভিডিওি নিয়ে তা অনিবন্ধিত বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ঘটান। আর এতেই শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে সত্য মিথ্যার মিশ্রিত ইদুর বিড়াল খেলা এমনটাই বলেন ভুক্তোভুগী ও সচেতন নাগরিক সমাজ।

এদিকে গত শনিবার সরেজমিনে ফতেপুর এলাকায় গেলে জটলা খুলে যায় অনেক রহস্যের। গ্রামবাসি একচেটিয়া বলতে থাকে এখানে বিডিএস পর্চা জরিপে কি পরিমান অর্থ উৎকোচ নেয়া হয়েছে। ফতেপুর এলাকার রাজিব বলেন, তার ৪ শতাংশ জমি রেকর্ড করাতে লেগেছে ৫ হাজার টাকা। দেলু মিয়া বলেন, তার ২২ শতাংশ জমি রেকর্ডে লেগেছে ১০ হাজার টাকা। তাদের দাবি ছিল ২০ হাজার টাকা। রহিজ মোল্লা বলেন, তার ১৭ শতাংশে লেগেছে ১৫ হাজার টাকা। কামালের লেগেছে ১৫ হাজার টাকা, দাবি ছিল ৩০ হাজার টাকা। লালমুদ্দিন বলেন, তার লেগেছে ৮ হাজার টাকা। ইয়াসমিন বলেন, তার সাড়ে ২১ শতাংশে লেগেছে ৩০ হাজার টাকা। দেলু বাবুর্চি বলেন, তার লেগেছে ১৫ হাজার টাকা। তবে তাদের দাবিকৃত টাকা না দেয়াতে তার এক শতাংশে জমির রেকর্ড কম দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এছাড়াও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভুক্তোভুগী বলেন, জমির পরিমাণ ভেদে ৫ হাজার থেকে শুরু করে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন জরিপ কাজে সংশ্লিষ্টরা, আর এ কাজে স্থানীয় মেম্বার দীন ইসলামসহ বেশ কয়েকজন দালালরা নিজেদের স্বার্থ হাছিল করতে তাদের সহযোগীতা করেছেন । এমনকি শত শত লোকজনদের বিভিন্নভাবে ফুঁসলিয়ে আদায় করা হয়েছে কয়েক কোটি টাকা এমনটাই অভিযোগ করেন ভুক্তোভুগী ও সচেতন নাগরিক সমাজের সুশীল বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে ফোনে কথা হলে চান্দহর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার দীন ইসলাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে এলাকায় একটি চক্র আছে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে বাঁধা দেয়াতে উল্টো আমার ওপর দোষ চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

সিংগাইর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসার মকবুল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, দেখুন আমি এখন দিনাজপুরে রয়েছি অফিসিয়াল কাজে। সিংগাইর উপজেলার ফতেপুর মৌজার জরিপের দুর্নীতির কথা বলতেই তিনি বলেন, দেখুন এ বিষয়ে ঢাকা সেটেলমেন্ট অফিস হতে তদন্ত কর্মকর্তা এসে শুনানি করেছেন। সেখানে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সাংবাদিকবৃন্দসহ গণ্যমান্য লোকজনদের উপস্থিতি ছিল।

মুঠোফোনে কথা হলে ঢাকা সেটেলমেন্ট অফিসের জরিপ ও ভূমি রেকর্ড এর উপ-পরিচালক রকিবুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় শুনানী হয়েছে কেউ বলছে টাকা লেগেছে আবার কেউ বলছে লাগেনি। তবুও খবর শুনে কর্তৃপক্ষ জরিপের কাজ পরিচালনাকারী সবাইকে বদলি করেছেন। তদন্ত চলমান রয়েছে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।

শেয়ার করুন:

আরো সংবাদ
© All rights reserved © janashokti

Developer Design Host BD