কোর্ট থেকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা পাওয়া বিএনপির সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। এজন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) দুপুরে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খাঁন নিখিলের নেতৃত্বে এ স্বারকলিপি দেন সংগঠনটির নেতারা।

১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর, ২১ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর এবং কানাডার ফেডারেল কোর্ট থেকে সন্ত্রাসী সংগঠনের আখ্যা পাওয়া বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিতে এ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গঠিত মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুজিব বাহিনীর স্রষ্টা ও বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক শহীদ শেখ ফজলুল হক মণির হাতেগড়া দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ একটি যুব সংগঠন।

আমরা বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত, লড়াই-সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যমে বেড়ে ওঠা গৌরবময় ইতিহাসের ধারক সংগঠন। লাখ লাখ যুবকের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর যুবলীগের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।

• ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পর অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করা এবং ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখতে অবৈধ উপায়ে সামরিক আদালতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ও সৈনিকদের ফাঁসি দেওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী খুনি জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার দাবি করছি।

• বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনিদের মধ্যে ছয়জনের ফাঁসির রায় ইতোমধ্যে কার্যকর হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরও পাঁচজন আসামি এখনও পলাতক রয়েছে। যাদের মধ্যে দুজন কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পলাতক খুনিদের অনতিবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের জোর দাবি জানাচ্ছি।

• ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকারের কাছে জীবনে কখনও রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে পালানো তারেক রহমান বিদেশে বসে এখনও দেশের চলমান উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। তিনি দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চক্রান্ত করে চলেছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের নারকীয় ঘটনা ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাস্টারমাইন্ড এবং দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানকে অনতিবিলম্ব দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকরের জোর দাবি জানাচ্ছি।

• বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। কানাডার ফেডারেল কোর্ট পরপর পাঁচ বার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর) মামলাতেও বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন। বিএনপির জন্মই হয়েছিল হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে বা ক্ষমতার বাইরে থেকেছে সংগঠনটি বরাবরই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থেকেছে।

২০০১-২০০৬ সাল বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের প্রায় ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। তারা নাটোরের মমতাজ উদ্দিন, খুলনার মঞ্জুরুল ইমাম, সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা, গাজীপুরের আহসান উল্লাহ মাস্টার, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজনকে হত্যা করে। তারা সারাদেশে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে ও লুটপাট চালিয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সঙ্গে সংগঠনটি জড়িত। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বিএনপির মদদে সারাদেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। শুধু তাই নয়, ২০১৩-২০১৪ সালে ক্ষমতায় যেতে না পেরে হরতাল-অবরোধের নামে হাজার হাজার গাড়ি পুড়িয়েছে, শত শত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে ও গবাদি পশুও তাদের অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রক্ষা পায়নি। তারা শত শত স্কুল-কলেজ পুড়িয়ে দিয়েছিল।

আরও বলা হয়, এ অপতৎপরতার কারণেই আন্তর্জাতিক মহল বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আজও তারা পূর্বের ন্যায় মানুষ হত্যা করছে, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করছে এবং দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করে চলেছে। অবিলম্বে সন্ত্রাসী সংগঠন বিএনপিকে নিষিদ্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।

স্মারকলিপির মাধ্যমে উপরোল্লিখিত বিষয়ে অনতিবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ জানায় যুবলীগ।